বাবলি- বুদ্ধদেব গুহ
লেখা হিসাবে বাবলি যে খুব উঁচু দরের কোন উপন্যাস তা নয়। বরং বোকা বোকা প্রেমের উপন্যাস হিসাবে classification করাটাই সমীচীন হবে। বুদ্ধদেব গুহ'র মুনশিয়ানা কিন্তু তাঁর উপন্যাসের কাহিনীসূত্র বিন্যাসে নয়, তাঁর ভাষার কারুকার্যে। ভাষা দিয়ে যে কি অপূর্ব সুন্দর ছবি আঁকা যায়, সেটা বুদ্ধদেব গুহ'র লেখা পড়লে বারবার করে মনে হয়।
প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে না দেখলে, ভিতর থেকে পাগলের মত ভালো না বাসলে এ লেখা আসেনা। আর সব থেকে টান মেরে যায় লেখায় রঙের ব্যবহার। কোন প্রচলিত অর্থে রঙের ব্যবহার নেই তাঁর লেখায়। কিন্তু সেই রঙ এমন ভাবে আসে যে পড়তে পড়তে চোখ বুজে কল্পনা করে নিতে এতটুকু অসুবিধা হয় না দৃশ্যটা।
আর কিছু না, শুধু এই কথা দিয়ে এঁকে দেওয়া ছবি টুকুর লোভেই বারবার বুদ্ধদেব গুহ'র কাছে ফিরে ফিরে আসা।
"তখন সবে ভোর হচ্ছে। ঝরঝর করে বয়ে চলেছে বর্ষার ঘোলা জলে ভরা ডিফু নদী পাহাড়ের বুক কেটে। এপাশে রাস্তা, ওপাশে ঘন গভীর জঙ্গল। নানারকম বাঁশ ঝোপ, জংলী কলাগাছের ঝাড়, বেত বন, আরো কত কি গাছগাছালি। নদীটা এখানে খুব সামান্যই চওড়া হয়ে গেছে সমতলে পড়ে। নদীর দু'পাশে কুমারী গাছ-গাছালি এমন চন্দ্রাতপের সৃষ্টি করেছে যে ভরদুপুরেও আলো পড়ে না নদীতে। নদীর গায়ে লাগা সবুজ লতা পাতায় তাই কেমন একটা হলুদ ছোপ লেগেছে। লাল জলের গর্জন, ফিকে হলুদ আর গাঢ় সবুজে ভরা বন, আর তার পাশে চড়াইয়ে ওঠা ডিমাপুর কোহিমা রোড।"
পাঠক, একটু শান্ত হয়ে উপরের অংশ টুকু পড়ে নিয়ে চোখ বুজে একবার দেখুন তো, দেখতে পান কি না? শুধু প্রকৃতি বর্ণনা নয়, সে অনেকেই করেছে আগেও, এখনো করে, ভবিষ্যতেও করবে। এই যে রঙ নিয়ে খেলা- পুরো বর্ণনা টা কেমন একটা রঙিন ছবির মত চোখের সামনে ভেসে উঠল না?
ফটোগ্রাফ নয়, ভিডিওগ্রাফ।
এর সাথে আরো একটা জিনিস যোগ করতে হয়, না হলে বুদ্ধদেব গুহ'কে নিয়ে যে কোনো আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। নারী-পুরুষের সম্পর্কের চরিত্র চিত্রণ নিয়ে নয়, কিন্তু সেই সম্পর্কের ছবি আঁকতে গিয়ে উনি মাঝে মাঝে কিছু এমন অমোঘ শব্দ-বন্ধ উচ্চারণ করে গেছেন- যার কোন তুলনা আধুনিক বাংলা সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া খুব দুরূহ।
"ভালোবাসা, কারো প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা যে কত তীব্র দুঃখময় অনুভূতি এ-কথার আভাস যেন বিদ্যুচ্চমকের মতো বাবলির বুকে বাজলো।" এমন অমোঘ কিছু উচ্চারণ আর রঙিন ছবির খোঁজে ফিরে ফিরে আসা বুদ্ধদেব গুহ'র লেখা।
প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে না দেখলে, ভিতর থেকে পাগলের মত ভালো না বাসলে এ লেখা আসেনা। আর সব থেকে টান মেরে যায় লেখায় রঙের ব্যবহার। কোন প্রচলিত অর্থে রঙের ব্যবহার নেই তাঁর লেখায়। কিন্তু সেই রঙ এমন ভাবে আসে যে পড়তে পড়তে চোখ বুজে কল্পনা করে নিতে এতটুকু অসুবিধা হয় না দৃশ্যটা।
আর কিছু না, শুধু এই কথা দিয়ে এঁকে দেওয়া ছবি টুকুর লোভেই বারবার বুদ্ধদেব গুহ'র কাছে ফিরে ফিরে আসা।
"তখন সবে ভোর হচ্ছে। ঝরঝর করে বয়ে চলেছে বর্ষার ঘোলা জলে ভরা ডিফু নদী পাহাড়ের বুক কেটে। এপাশে রাস্তা, ওপাশে ঘন গভীর জঙ্গল। নানারকম বাঁশ ঝোপ, জংলী কলাগাছের ঝাড়, বেত বন, আরো কত কি গাছগাছালি। নদীটা এখানে খুব সামান্যই চওড়া হয়ে গেছে সমতলে পড়ে। নদীর দু'পাশে কুমারী গাছ-গাছালি এমন চন্দ্রাতপের সৃষ্টি করেছে যে ভরদুপুরেও আলো পড়ে না নদীতে। নদীর গায়ে লাগা সবুজ লতা পাতায় তাই কেমন একটা হলুদ ছোপ লেগেছে। লাল জলের গর্জন, ফিকে হলুদ আর গাঢ় সবুজে ভরা বন, আর তার পাশে চড়াইয়ে ওঠা ডিমাপুর কোহিমা রোড।"
পাঠক, একটু শান্ত হয়ে উপরের অংশ টুকু পড়ে নিয়ে চোখ বুজে একবার দেখুন তো, দেখতে পান কি না? শুধু প্রকৃতি বর্ণনা নয়, সে অনেকেই করেছে আগেও, এখনো করে, ভবিষ্যতেও করবে। এই যে রঙ নিয়ে খেলা- পুরো বর্ণনা টা কেমন একটা রঙিন ছবির মত চোখের সামনে ভেসে উঠল না?
ফটোগ্রাফ নয়, ভিডিওগ্রাফ।
এর সাথে আরো একটা জিনিস যোগ করতে হয়, না হলে বুদ্ধদেব গুহ'কে নিয়ে যে কোনো আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। নারী-পুরুষের সম্পর্কের চরিত্র চিত্রণ নিয়ে নয়, কিন্তু সেই সম্পর্কের ছবি আঁকতে গিয়ে উনি মাঝে মাঝে কিছু এমন অমোঘ শব্দ-বন্ধ উচ্চারণ করে গেছেন- যার কোন তুলনা আধুনিক বাংলা সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া খুব দুরূহ।
"ভালোবাসা, কারো প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা যে কত তীব্র দুঃখময় অনুভূতি এ-কথার আভাস যেন বিদ্যুচ্চমকের মতো বাবলির বুকে বাজলো।" এমন অমোঘ কিছু উচ্চারণ আর রঙিন ছবির খোঁজে ফিরে ফিরে আসা বুদ্ধদেব গুহ'র লেখা।
Comments
Post a Comment